গ্রহণের সময় খাবার খাওয়া বা রান্না করা উচিত নয় কেন ?

why-should-not-cook-ate-on-the-time-of-solar-eclipse



why-should-not-cook-ate-on-the-time-of-solar-eclipse : গ্রহণের সময় খাবার খাওয়া বা রান্না করা উচিত নয় কিএর পেছনে কি কোন বৈজ্ঞানিক যুক্তি আছে ? নাকি পুরোটাই কুসংস্কার ?

কোন জিনিসের রহস্য উদ্ধার করতে গেলে আমাদের জানতে হবে সেই বিষয়টি ঘটার পেছনে আসল কারনটি কি ? যদি আমরা কোনভাবে সেই কারণটি জানতে পারি তাহলে তার পেছনের সকল রহস্য উদ্ধার হয়ে যাবে ।

 

ঠিক তেমনই আমরা যদি সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণের পেছনের কারণটি জানতে পারি তাহলে আমরা এটাও বুঝতে পারব গ্রহণের সময় খাবার খাওয়া বা রান্না করা বিপদজনক কিনা ?

তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক গ্রহণের রহস্য !

প্রথমে সুর্যগ্রহণ নিয়েই আলোচনা করা যাক ! কেন ঘটে সূর্যগ্রহণ ? এটা লিখে বোঝানো একটু হলেও কঠিন ! তাও চেষ্টা করছি যতটা সম্ভব !এই লেখার শেষে একটি ভিডিও সংযুক্ত করা হচ্ছে । লেখাটি পড়ার পর ভিডিওটি দেখলে পুরো বিষয়টি আরও পরিস্কার হয়ে যাবে !

 

আমরা জানি পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘোরে । ঠিক তেমনই চাঁদও একটি নির্দিস্ট কক্ষপথে পৃথিবীর চারিদিকে ঘোরে । এবং পৃথিবীর যেমন সূর্যের চারিদিকে একবার প্রদক্ষিন করতে ৩৬৫ দিন ( প্রায় ) সময় নেই । ঠিক তেমনই চাঁদও পৃথিবীর চারিদিকে একবার সম্পূর্ণ প্রদক্ষিণ করতে সময় নেই ২৭ দিন ( প্রায় ) ।

 

এখন চাঁদ পৃথিবীর চারিদিকে প্রদক্ষিণ করার সময় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অবস্থানে থাকে । নিচের চিত্রটি (চিত্র - ১ ) দেখলে আপনাদের কাছে বক্তব্যটি আরও পরিষ্কার হবে ।

 


why-should-not-cook-ate-on-the-time-of-solar-eclipse
চিত্র - ১


 

এবার কখনও কখনও চাঁদ পৃথিবীর চারিদিকে ঘুরতে ঘুরতে সূর্য এবং পৃথিবীর ঠিক মাঝে চলে আসে । সেই হিসেবে দেখতে গেলে প্রতি ২৭ দিনে একবার চাঁদ পৃথিবী এবং সূর্যের মাঝে আসে । কিন্তু চাদের কক্ষপথটি একই সরলরেখায় অবস্থান করে না । নিচের চিত্রটি ( চিত্র - ২ ) দেখলে আপনাদের কাছে বক্তব্যটি আরও পরিস্কার হবে ।


why-should-not-cook-ate-on-the-time-of-solar-eclipse
চিত্র - ২

 


 

আর এই একই সরলরেখায় কক্ষপথটি অবস্থান না করার ফলে প্রতি ২৭ দিনে একবার করে চাঁদ পৃথিবী ও সূর্যের মাঝে এলেও প্রতি ২৭ দিনেই সূর্যগ্রহণ হয় না । সূর্যগ্রহণ তখনই হয় যখন পৃথিবী   এবং সূর্যের কক্ষপথ একই সরলরেখায় চলে আসে । এবং এর ফলে পৃথিবীর একটি নির্দিস্ট অংশে সূর্যের ছায়া পড়ে । এবং শুধুমাত্র সেই অংশের মানুষের কাছে তখন মনে কেউ যেন সুর্যকে আসতে আসতে ঢেকে দিচ্ছে । বিষয়টি বোঝার জন্য নিচের চিত্রটি ( চিত্র - ৩ ) দেখুন ।

 

why-should-not-cook-ate-on-the-time-of-solar-eclipse
চিত্র – ৩

 

এখন কিছু সময় পর চাঁদ তার কক্ষপথে আরও একটি এগিয়ে যায় । ফলে সেই অঞ্চলের মানুষ আমার সূর্যকে পুরোপুরি দেখতে পায় । বিষয়টি বোঝার জন্য নিচের চিত্রটি দেখুন ।

why-should-not-cook-ate-on-the-time-of-solar-eclipse
চিত্র - ৪



 

এখন আসি আমাদের প্রধান প্রশ্নে ! এই গ্রহণের সময় কি তাহলে খাবার খাওয়া বা রান্না করা উচিত নয় ? অনেকে বলে থাকেন এই সময় অতি বেগুনি রশ্মির প্রকোপ বৃদ্ধি পায় ! আবার অনেক ফলে এইসময় নাকি পৃথিবীতে আলো সম্পূর্ণ না আসার ফলে ভাইরাস বা জীবাণুর প্রকোপ বৃদ্ধি পায় । সহজভাবে বিষয়টি বুঝুন যদি গ্রহণের সময় সময় ভাইরাস বা জীবাণুর পরিমান বৃদ্ধি পায় তাহলে প্রতিদিন রাত্রিবেলাতেও তো সূর্যের আলো আসে না ! তাহলে কি সেইসময়ও ভাইরাস , জীবাণু , বা অতি বেগুনী রশ্মির পরিমান বৃদ্ধি পায় ? কারন সেইসময়ও তো একইভাবে সুর্যের আলো পৌছায় না ! কই আমরা তো রাতের বেলা খাওয়া বন্ধ করি না ! রান্না করাও বন্ধ করি না ।

আসলেই এটা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত একটি ধারনা । গ্রহণের সময় কোনরকম জীবাণু বা ভাইরাস , অতি বেগুনী রশ্মির পরিমান বৃদ্ধি পায় না । এখনও পর্যন্ত একটিও গবেষণায় এই উদ্ভট তত্ব প্রমানিত হয়নি ।  এটা সম্পুর্নরুপে একটি কুসংস্কার । তবে এটা ঠিক বাসে , ট্রেনে ১০ টাকা দামের বৈজ্ঞানিক বইতে আপনি এই তত্ব অবশ্যই পাবেন । তাই যখন কোন বই পড়বেন একটু রিসার্চ করে নেবেন বই এর লেখক আদৌ বৈজ্ঞানিক না হাতুড়ে বৈজ্ঞানিক । মোদ্দা কথা হল বইটি কতটা অথেনটিক !

 

গ্রহণও আসলে অন্যান্য একটি প্রাকৃতিক ঘটনার মত একটি সাধারন ঘটনা । কিন্তু যেহেতু এটা সবসবময় ঘটে না বা প্রাচীনকালে গ্রহণের সঠিক কারন আমাদের জানা ছিল না । তাই আমরা এসব নিয়ে বিভিন্ন আজগুবি গল্প বানিয়েছিলাম ।

 

এছাড়াও গ্রহণ নিয়ে আরও অনেক কুসংস্কার যেমন – গ্রহণের সময় বাইরে বের হওয়া যায় না , জলে দূর্বা এবং তুলুসি মেশাতে হয় , খোল করতাল বাজাতে হয় , গর্ভবতী মহিলাদের জন্য এটি অত্যন্ত খারাপ ! জানবেন এইসকল বিষয়গুলির সামান্যতম ভিত্তি নেই । গ্রহণ দিনরাত্রির মতই একটি স্বাভাবিক এবং প্রাকৃতিক ঘটনা ।

 

 

  

আপনার মতামত নীচে কমেন্ট করুন...

গ্রহণের সময় খাবার খাওয়া উচিত নয় কেন ? দেখুন সেই ভিডিও ...



2 Comments

আপনার মতামত জানাতে কমেন্ট করুন

  1. Khub valo information. Tabe somoshya holo egulo amra pray sobai jani kintu mani na. Jodio ami kono dini esob mani ni ebong ekhono besh benche achi.

    ReplyDelete
  2. আপনি জানাচ্ছেন গ্রহণের সময় যা যা করতে বলা হয় সেগুলোর কোনো ভিত্তি নেই।
    হ্যাঁ, বুঝলাম আপনি কি বলতে চাইছেন।তাহলে এখানেও সেই একটা কথা ফিরে আসে যেটা আপনি জানালেন যে, যখন কোনো বই পড়া হবে তখন তার authenticity বিচার করে নিতে ।
    তবে তেমনি আপনার পোস্টটার authenticity র ভিত্তি কি?
    একটু জানাবেন��

    ReplyDelete

Post a Comment

আপনার মতামত জানাতে কমেন্ট করুন

Previous Post Next Post