ইমার্জেন্সি কি ও কেন ? ২৫ শে জুন কেন কালাদিবস ?

What is Emergency and Why is Emergency


What is Emergency and Why is Emergency  : আমাদের সংবিধানে তিন ধরনের এমার্জেন্সির উল্লেখ আছে । যথা –

 

জাতীয় এমার্জেন্সি –  

সংবিধানের ৩৫২ (১) ধারা অনুসারে জাতীয় এমার্জেন্সি ঘোষণা করা হয়   যদি দেশের সুরক্ষার উপর কোন আঘাত আসে অথবা দেশের কোন অংশে আইন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পরে তাহলে রাষ্ট্রপতি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার অনুরোধে জাতীয় এমার্জেন্সি ঘোষণা করতে পারেন ।স্বাধীন ভারতে মোট তিনবার জাতীয় ইমার্জেন্সি ঘোষিত হয়েছিল । ১৯৬২ সালে যখন ভারত চীন যুদ্ধ হয় । ১৯৭১ সালে যখন ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ হয় । এবং ১৯৭৫ সালে যখন ইন্দিরা গান্ধী প্রধানমন্ত্রী ছিলেন । তবে এদের মধ্যে সব থেকে ভয়ঙ্করতম দিন ছিল ১৯৭৫ সালের ইমার্জেন্সি    ১৯৭৫ সালে ২৫ শে জুন দেশের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী জাতীয় এমার্জেন্সি ঘোষণা করেন । যা ২১ মাস ধরে চলে   ইমার্জেন্সি ঘোষিত হলে মানুষ তার মৌলিক অধিকার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয় ।

 

রাজ্যের সাংবিধানিক ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়া – 

সংবিধানের ৩৫৬ ধারা অনুসারে রাষ্ট্রপতি কোন রাজ্যে এমার্জেন্সি ঘোষণা করতে পারেন । রাজ্যপালের দেওয়া রিপোর্ট অনুসারে অথবা যদি রাষ্ট্রপতি নিজেও মনে করেন রাজ্যের আইনব্যবস্থা ভেঙ্গে পরেছে এবং সেই অবস্থা সামলানোর ক্ষমতা রাজ্য সরকারের নেই  সেক্ষেত্রে এই ইমার্জেন্সি ঘোষণা হতে পারে । সাধারনত তিনটি কারণে এই ইমার্জেন্সি ঘোষিত হতে পারে । রাজ্যের আইন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পরলে , রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হলে  অথব প্রশাসনিক দুর্নীতি চরম পর্যায়ে গেলে । ইমার্জেন্সি ঘোষিত রাজ্য পরিচালনার সমস্ত ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির অধীনে চলে যায় । ৩৫৬ ধারা অনুসারে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে বহুবার ইমার্জেন্সি ঘোষিত হয়েছে ।

 

অর্থনৈতিক এমার্জেন্সি - 

সংবিধানের ৩৬০ ধারা অনুসারে অর্থনৈতিক ইমার্জেন্সি ঘোষিত হতে পারে । রাষ্ট্রপতি যদি মনে করেন সমগ্র দেশের অথবা দেশের কোন অংশের অর্থব্যবস্থা ভেঙ্গে পরেছে সেক্ষেত্রে তিনি এই ধারা প্রয়োগের মাধ্যমে অর্থনৈতিক ইমার্জেন্সি ঘোষণা করতে পারেন । অর্থনৈতিক ইমার্জেন্সি ঘোষিত হলে কেন্দ্রের কার্যনির্বাহী কতৃপক্ষ রাজ্যকে বিভিন্ন অর্থনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দিতে পারে । স্বাধীনতার পরবর্তীকালে কখনই অর্থনৈতিক ইমার্জেন্সি ঘোষিত হয়নি ।


২৫ শে জুন কেন কালা দিবস ?

১৯৭৫ সালের ২৫ শে জুন ঘোষিত হওয়া জাতীয় ইমার্জেন্সিকে আলাদাভাবে বলতেই হয় । কেন এই দিনটিকে কালাদিবস বলা হচ্ছে ?

শুরু করা যাক ১৯৭১ সাল থেকে । বিপুল আসলে হয়ে দেশের সরকার গঠন করলেন ইন্দিরা গান্ধী । দেশের মানুষের মধ্যে বিপুল জনপ্রিয়তা তাঁর । সেইসময় এমনই বলা হত ইন্দিরা ইজ ইন্ডিয়া , ইন্ডিয়া ইজ ইন্দিরা । কিন্তু কি এমন হল ৪ বছর গড়াতে না গড়াতেই জাতীয় ইমার্জেন্সি ঘোষণা করতে হল ?

এই ঘটনা প্রমান করে দেশের প্রধান যদি একনায়কতন্ত্রী হয় তাহলে তা দেশের জন্য কত বড় ক্ষতিকর । এইঘটনা এটাও প্রমান করে যে যতবড়ই একনায়কতন্ত্রী হোক না কেন দেশের মানুষ তাকে একটা না একটা সময় ছুড়ে ফেলবে আস্তাকুড়ে !

 

১৯৭১ সালে ইন্দিরা গান্ধী দেশের সরকার গঠন করার পর নিজেকে সুপ্রিম ভাবতে শুরু করেন । এবং নিজের ইচ্ছাধীনভাবে সরকার চালাতে থাকেন । এরফলে ধীরে ধীরে জনগণের মধ্যে বাড়তে থাকে ক্ষোভ । অন্যদিকে এলাহাবাদ হাইকোর্ট এ একটি মামলায় বিচারক জগমোহন সিনহা রায় দেন ইন্দিরা গান্ধী ভোটে জেতার জন্য সরকারী ক্ষমতাকে অন্যায়ভাবে ব্যবহার করেছেন । এবং এই কারণে বিচারক সিনহা তাঁর জেতা লোকসভা সিটকে বাতিল করেন এমনকি ইন্দিরা গান্ধীকে আগামী ছয়বছরের জন্য  যে কোন ভোটে দাঁড়ানো থেকে ব্যান করা হয় । এই রায়ের বিরুদ্ধে ইন্দিরা গান্ধী সুপ্রিম কোর্টে আর্জি করেন । ১৯৭৫ সালের ২৪ শে জুন সেখানেও এই রায়কে আংশিকভাবে বহাল রাখা হয় ।  

এরপর দিনই ইন্দিরা গান্ধী জাতীয় ইমার্জেন্সি ঘোষণা করেন । যারা সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রদর্শন করেন তাদের দলে দলে জেলে ঢোকানো হয় । কোনরকম পিটিশন কোর্টে দাখিল করতে দেওয়া হয়না । বলা হয় জাতীয় ইমার্জেন্সি ঘোষণার আগের দিন সকল সংবাদপত্রের অফিসের বিদ্যুৎ কেটে দেওয়া হয় ।

এইসময় সংবাদপত্রে কোন কিছু ছাপতে গেলে আগে সরকারের অনুমতি নিতে হত । সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত সরকারের নিয়ন্ত্রনে চলে আসে । জাতীয় ইমার্জেন্সি ঘোষিত হওয়ার ফলে মানুষ তাঁর মৌলিক অধিকারগুলি থেকেও বঞ্চিত হয় ।  

 

এই ইমার্জেন্সি প্রায় ২১ মাস ধরে চলে । ২১ মাস পর ইন্দিরা গান্ধী নিজেই ইমার্জেন্সি তুলে দেন এবং ভোটের ঘোষণা করেন । তিনি মনে করেছিলেন হয়ত সরকারী ক্ষমতার জোরে মানুষকে চুপ করিয়ে দিতে পারবেন ! অন্ততপক্ষে তাঁর চাটুকারেরা হয়তো সেইধরনের কথায় বুঝিয়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধীকে । তাই হয়ত তিনি ভেবেছিলেন ভোট হলে তিনি আবার জয়ী হবেন ! কিন্তু আমি আগেই বলেছি যত বড় একনায়কতন্ত্রী হোক না কেন জনগণ তাকে শায়েস্তা করবেই । ১৯৭৭ সালে নির্চাচনের ঘোষণা হল এবং সেই নির্বাচনে ভয়ঙ্করভাবে পরাজয় ঘটল  ইন্দিরা গান্ধীর । জয়ী হল গণতন্ত্র !


আজ ২৫ শে জুন ২০২০ সেই কুখ্যাত দিন । আজ জাতীয় এমার্জেন্সি ঘোষণার ৪৫ বছর পুর্তি হল । এবিষয়ে আপনার মতামত কমেন্টে জানান । 

 


Post a Comment

আপনার মতামত জানাতে কমেন্ট করুন

Previous Post Next Post